Breaking News

আপকামিং বুকঃ গল্পের তুলিতে সালাফদের জ্ঞান সাধনা

আপকামিং বুকঃ গল্পের তুলিতে সালাফদের জ্ঞান সাধনা

আপকামিং বুকঃ গল্পের তুলিতে সালাফদের জ্ঞান সাধনা



আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। একটি নাম। একটি ইতিহাস। সমকালীন সবাইকে ছাড়িয়ে মর্যাদার চূড়ায় আরোহণের সংগ্রামী ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই নামটির সাথে। ইলমের প্রতি প্রবল আগ্রহে সবসময়ই কানায় কানায় পূর্ণ থাকতো তার হৃদয় নহর। এক মুহূর্তের জন্যেও ভাটা পড়েনি তার জ্ঞানের নদীতে।
রাসুলের যুগ। সোনালী যুগ। আসমানী প্রত্যাদেশ অবতীর্ণের যুগ। বালক ইবনে আব্বাস। বয়স সবেমাত্র ৮-১০ বছর। এইটুকুন বয়সেই মনের মাঝে কৌতুহল জাগলো, আচ্ছা, আল্লাহর রাসূলের পূণ্যময় রাত কাটে কিভাবে? কেমন হয় তাঁর রাত দুপুরের সালাত? রাত কতটা গভীর হলে আল্লাহর সামনে দাঁড়ান তিনি?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে সঙ্গী হতে হবে তাঁর নৈশ জীবনের। দাঁড়াতে হবে সালাতে তাঁর পাশে। বিনিদ্র থাকতে হবে দীর্ঘ রজনী। কিন্তু কিভাবে? তিনি তো মাসজিদে তাহাজ্জুদ আদায় করেন না। বরং তিনি রাতের নামায গুলো ঘরেই আদায় করেন। তাহলে উপায়?
হ্যাঁ উপায় একটা আছে। উম্মুল মুমিনীন মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহা। রাসূলের প্রিয় সহধর্মিনী। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের খালা। সময় করে এক রাতে তার কাছেই থাকতে হবে।
তখন মাঝরাত। তারা ভরা আকাশের নিচে এক ঘুমন্ত নগরী মাদিনা মুনওয়ারা। বাতাসের মৃদু হিল্লোল প্রকৃতিতে। তাতে মনে হচ্ছে শুধু ওরাই জেগে আছে। কিছুদিন আগেও এ ভূমির নাম ছিল ইয়াসরিব। ছিল শির্কের কালো অন্ধকারে ঢাকা। আর এখন হেথায় এসেছেন শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । জ্বেলেছেন একত্ববাদের দীপ্ত মশাল। এ নগরী তাই তাওহীদি আলোর এক অদৃশ্য আবরণে আবৃত।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠলেন তাহাজ্জুদ আদায়ের জন্য। আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা নিবেদনের জন্য। পবিত্রতা অর্জনের জন্য লোটায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলেন তা পানিতে পূর্ণ।
স্বাভাবিক এমন হয় না। কলসের মতো একটা বড় পাত্রে পানি মজুদ থাকে। যেখান থেকে ছোট লোটায় পানি নিয়ে ওযু করেন তিনি। অনেক সময় কলোসে পানি থাকে না। তখন বাইরে যেতে হয়। একটু কষ্ট হয় বটে।
আজকের চিত্র এর ব্যতিক্রম। লোটা ধরেই দেখেন তা পানিতে পূর্ণ। আল্লাহর নবী মোহিত হলেন। প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন, লোটায় পানি কে রেখেছে?
উত্তর এলো আব্দুল্লাহ রেখেছে।
খুশিতে ভরে গেল তাঁর হৃদয়। মুগ্ধতার পরিধি বিস্তৃত হলো। এইটুকু ছেলে ভেবেছে কিভাবে রাসূলকে সন্তুষ্ট করা যায়? কিভাবে জয় করা যায় তার মন?
আল্লাহর রাসূল অন্যরকম পুলক অনুভব করেছেন মনের গহীনে। অন্তরের গভীর থেকে উৎসারিত হলো এ প্রার্থনা, হে আল্লাহ তুমি ওকে দিনের গভীর জ্ঞান দান করো। তোমার কিতাবের ব্যাখ্যা শিক্ষা দাও।
আরেকটি শেষ রাত্রির গল্প শোনো। সময়ের ডানায় ভর করে রজনী এসেছে তার শেষ প্রহরে। চারপাশে অন্ধকার। নিকষ অন্ধকার। রাসূলের ঘরের ভেতরটা হবার কথা আরো বেশি তিমিরাচ্ছন্ন। কিন্তু না, তাঁর ঘর যেন নবুয়াতি নূরের এক অপার্থীব পাতলা আলোয় আলোকিত। এ সূর্যের আলো নয়। নয় চাঁদের জোছনা। এ যে স্বর্গীয় জ্যোতির আলোক আভা।
রোজকার মতো নবীজি সালাতে দাড়ালেন। কি আশ্চর্য! আল্লাহর নবীর এ পল্লব কুঠির এক অন্যরকম মন মাতানো সৌরভে সুরভিত। এ সুবাস গোলাপ বেলির সুবাস নয়। নয় হাসনাহেনা বা রজনীগন্ধার। এ সুঘ্রান মুহাম্মদী ফুলের সুঘ্রাণ। যার কোন তুলনা হয় না।
ইবনে আব্বাস দেখছেন রাসুলের সালাত। জীবন্ত নামাজ। সে নামাজে বিনয় ও নম্রতার পূর্ণ বিকাশ। উবূদিয়্যাত ও দাসত্বের চূড়ান্ত প্রকাশ। স্থির চিত্ত। শান্ত দেহ। সন্দেহ নেই যে তিনি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো।
তিনি এসেছেন রাসূলের ইবাদাত দেখার জন্য। অংশ নেবার জন্য তাঁর নামাজে। তাই আর দেরি করলেন না। নবীজির পেছনে এসে দাঁড়ালেন। হাত বেঁধে স্থির হওয়ার আগেই রাসূলুল্লাহ তাকে টেনে পাশে দাঁড় করালেন। মুহূর্ত কাল তাঁর পাশে থাকলেন। কিন্তু কি যেন মনে করে আবার পেছনে সরে গেলেন। ফিরে গেলেন আগের জায়গায়।
.... চলবে
গল্প ২ঃ মাটির বিছানায়আপকামিং বুকঃ গল্পের তুলিতে সালাফদের জ্ঞান সাধনা
প্রচ্ছদঃ Hasan Hafiz & Golam Ahad
ভাষান্তরঃ Hasan Shuaib

No comments