Breaking News

Bangla Horror Golpo | Sahosh | Bangla Bhooter Golpo

Bangla Horror Golpo | Sahosh | Bangla Bhooter Golpo


Bangla Horror Golpo | Sahosh | Bangla Bhooter Golpo


সাহস
এক.
“খুব তো সাহস দেখাছ। অথচ আজকেও মিলির সামনে দাঁড়ায়া কিছু কইতে পারলি না।”
“সাহস তো ভরপুর আছে দোস্ত। খালি মিলির সামনে গেলেই হাঁটু দুইটা কাঁপে আর গলাটা শুকায়া যায়।”
“হ, তোর মতন এমন সাহসী পোলা জীবনে বহুৎ দেখছি।”
“ওই একটা কাম বাদে সাহস দেখানোর মত অন্য যে কোন কাম করতে বল, কইরা দেখায়া দেই।”
“শিউর?”
“হ, শিউর।”
“আমাদের বাসার কাছে যে গোরস্তানটা আছে, রাইত দুইটার সময় ওই গোরস্তানের ভিত্রে একলা ঢুইকা পুরাটা একটা চক্কর দিয়া আইতে পারবি?”
“খালি এইটুক কইরা দেখাইলেই হইব?”
“না চান্দু। পুরাটা চক্কর দিছস কিনা, বুঝুম ক্যামনে? এইটা প্রমাণের জন্য লাস্ট যে কব্বরটা আছে, ওইটার পাশে খাড়ায়া একটা সেলফি তুইলা আনবি।”
“ওক্কে দোস্ত। কোন ব্যাপার না। কিন্তু এত রাইতে গোরস্তানে যাইতে হইলে আজকে তোর বাসায় রাইতে থাকতে হইব। নাইলে এত রাইতে বাসা থিক্যা বাইরাইতে পারুম না।”
“থাকিছ। কোন সমস্যা নাই। দুই বন্ধু মিল্যা রাইতে অনেক মাস্তি করুম নে।”
দুই.
রাত দুইটা পেরিয়ে গেছে। কান্দিরপাড় নামক এই মফস্বল এলাকায় এত রাতে একটা কুকুরও থাকে না রাস্তায়। কবরস্থানের গেট থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মিলন। শুনেছে রাতেরবেলায় কবরস্থানে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু এই রাতেরবেলায় কজন তা মানতে চাইবে? তার ওপর যদি কবরস্থানটা হয় অনেক পুরোনো, তাহলে..
শীতের শেষ আর বসন্তের শুরুর দিকের এই সময়টায় খানিক পর পর জোরালো হাওয়া এসে মিলনের পুরো শরীরটা কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কবরস্থানটা খুব বেশি বড় নয়। প্রান্ত মিনিট দশেক হল কবরস্থানে ঢুকেছে। এতক্ষণে ওর চলে আসার কথা। ভেতরে ঢোকার আগে প্রান্তর হাতে নিজের গ্যালাক্সি জে-ফাইভটা ধরিয়ে দিয়েছে মিলন। গ্যালাক্সি জে-ফাইভের ফ্রন্ট ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ আছে। অন্ধকারে সেলফি তোলায় কাজে আসবে।
প্রান্ত এখনও আসছে না কেন? কিছু হল-টল না তো আবার? বন্ধুর অমঙ্গল চিন্তায় মিলনের মনটা ভারী হয়ে আসে। তারপরও প্রান্তর খোঁজ নিতে কবরস্থানের ভেতরে ঢোকার সাহস করে উঠতে পারে না।
ক্যাঁ-এ-এ-এ-চ!
কবরস্থানের গেটটা একটু নড়ে উঠল কি? শব্দটা শুনে চমকে উঠে মিলন বুকে একগাদা থুথু ছিটায়। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা ধ্বক ধ্বক শব্দে খুব জোরে বাড়ি খাচ্ছে। যেন শার্টের বুক পকেট ছিঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে। মিলন জোরে জোরে আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দেয়। হাততালিও দিবে কিনা ভাবছে, ঠিক তখনই কবরস্থানের গেট টপকে প্রান্ত বেরিয়ে আসে।
“কিরে, এত দেরী করলি ক্যান? তুই তো আমার জানটা উড়াই দিছিলি ব্যাটা।”
“ভাবলাম ঢুকছি যখন একটু ঘুইরা-ঘাইরা যাই। ভিত্রে ঢুকার পর খুব জোরে মুত চাপছিল। মুইতা দিয়া আইছি।”
“কস কী হালা? এইডা একটা কাম করছস? তুই জীবনেও ভালা হইবি না। দেখিছ তোর মুত যার কব্বরের উপর পড়ছে, উই হালায় মুতের গন্ধে রাইতে তোর ঘাড় মটকাইতে আইব। হাহাহা!”
“দোস্ত, তোর মোবাইলটা নে। গ্যালারি ওপেন কইরা দেখ সেলফিটা তোর মন মত হইছে কিনা।”
“আরে এতক্ষণ ভিত্রে ছিলি, এইটাই বিরাট ব্যাপার। সেলফি দেইখ্যা আর কী হইব? আরে আরে.. তুই কই যাস?”
“বাসায় চইলা যামু রে। কেন জানি ভাল্লাগতেছে না। কব্বরে মুতনের লাইগ্যা মরা মাইনষেরা মনে হয় অভিশাপ দিছে।”
“তুই না কইলি রাইতে তোর বাসায় ঢুকতে বাইরাইতে প্রবলেম?”
“অসুবিধা নাই। ভাইয়া রাত জাইগা পড়ে। জানলায় ঠক ঠক করলেই দরজা খুইলা দিব।”
“আইচ্ছা যা তাইলে। কাইলকা দেখা হইব।”
প্রান্তর শরীরটা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। মিলনও কাঁপতে কাঁপতে তার বাড়ির পথ ধরে। এবার আর ভয়ে কাঁপছে না। কাঁপছে ঠান্ডায়।
তিন.
সকাল সকাল মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে মিলনের।
“মিলন, একটু গোরস্তানের দিকে যা তো বাবা।”
“ক্যান মা? কী হইছে?”
“তোর বন্ধু প্রান্ত..” বলতে বলতে মিলনের মায়ের গলাটা ধরে আসে।
মিলন লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাতে শোবার থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট পরা অবস্থাতেই বাসা থেকে বের হয়ে কবরস্থানের দিকে দৌড় দেয়।
কবরস্থানের একেবারে শেষ মাথার কবরটার কাছে অনেক মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে মিলন ভেতরে উঁকি দেয়। উঁকি দিয়ে যে দৃশ্যটা দেখতে পায়, সেটা না দেখলেই বোধহয় ওর জন্য অনেক ভাল হত। শেষ মাথার কবরের পাশে প্রান্তর শরীরটা পড়ে আছে। দেখেই বোঝা যায়, ওই শরীরে প্রাণ নেই। প্রান্তর মৃতদেহের পাশে ওর বাবা-মা আর বড় ভাই হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছে। প্রথম দেখায় মিলন ভেবেছিল প্রান্তর শরীরটা চিৎ হয়ে পড়ে আছে। খানিক পর বুঝতে পারে, শরীরটা আসলে উপুড় করা। প্রান্তর মাথাটা মুচড়ে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাপারটা বোঝার পর মিলনের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। প্রান্তর চোখের পাতা বুঁজিয়ে দেয়া হয়েছে, তা না হলে দেখতে আরও বীভৎস লাগত।
যেভাবে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকেছিল, ঠিক সেভাবেই আবার ভিড় ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এল মিলন। ভয়ে ওর পুরো শরীর এখনও কাঁপছে। কাঁপা হাতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারিতে ঢোকে। তারপর সর্বশেষ তোলা ছবিটা ওপেন করে গতরাতে যেটা প্রান্ত তুলেছিল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কবরটার পাশে প্রান্ত ঠিক এখনকার মতই মাথা মোচড়ানো অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পার্থক্য শুধু এটাই যে, ছবিতে প্রান্তর চোখ দুটো খোলা। বিস্ফোরিত চোখ জোড়া কী এক অজানা আতঙ্কে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
মোবাইল হাতে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মিলন বুঝে উঠতে পারে না, ছবি তোলার আগেই যদি প্রান্ত মরে গিয়ে থাকে তাহলে গতরাতে ওর হাতে মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়া মানুষটা কে ছিল? আর ছবিটাই বা কে তুলেছিল? মিলনের অবশ হয়ে আসা হাত থেকে মোবাইলটা আপনাআপনি নিচে পড়ে যায়। মিলন মাটি থেকে মোবাইল কুড়িয়ে না নিয়ে অপ্রকৃতিস্থের মত বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে।
© আহসানুল হক শোভন
রচনাকালঃ ২৯শে এপ্রিল, ২০১৬

No comments